আলোর গতিতে ভ্রমণ কি সম্ভব ?

আমরা সকলেই জানি ব্রহ্মাণ্ডে আলোর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি , যা প্রায় 1,86,000 মাইল প্রতি সেকেন্ড এছাড়াও এটা তো আপনারা অনেকেই শুনেছেন যে যদি আমরা আলোর চেয়েও বেশি গতিসম্পন্ন কোনো যান আবিষ্কার করতে পারি তবে টাইম ট্রাভেল অর্থাৎ সময় যাত্রা করা সম্ভব । আজ অবধি পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ট্রাভেল করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম উঠিয়েছে অ্যাপোলো 10 এর অ্যাস্ট্রোনটস রা , তারা তাদের স্পেস ক্রাফটে করে সর্বোচ্চ 40 হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘন্টার বেগে ভ্রমণ করেছিল সেই গতিতে সমগ্র পৃথিবীকে এক ঘণ্টায় চক্কর কাটা সম্ভব । কিন্তু আজকের আমাদের এই 21 শতকের মডার্ন সায়েন্স আরো অনেক বেশি প্রত্যাশা করে, যেমন 100 কোটি কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় গতি অর্থাৎ প্রায় আলোর গতিবেগের সমান ।
আপনাদের কি মনে হয় আমরা যদি আমাদের গতিবেগে ভ্রমণ করতে পারি তবে কি আমরা সমগ্র ইউনিভার্স কে এক্সপ্লোর করতে পারবো ? আমরা কি আমাদের সৌরজগৎ থেকে বেরিয়ে অন্য কোন স্টার সিস্টেম বা গ্যালাক্সিতে পৌঁছাতে পারবো ? আদৌ কি আলোর গতিবেগে ট্রাভেল করা সম্ভব ? সম্ভব হলেও কিভাবে , চলুন জেনে নিই ।
তো আলোর গতিতে ভ্রমণ এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সায়েন্স ফিকশন মুভিজ এই দেখা গেছে আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে হলে আমাদের এই মডার্ন সাইন্স কে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে সেগুলি নিম্নলিখিত ।

Light Speed OdhiGYAN


আলোর গতিতে ভ্রমণের সমস্যা

প্রথম সমস্যা


আজ অবধি সবচেয়ে বেশি গতিবেগে ভ্রমণ করা মানুষ্যসৃষ্ট যানের নাম Voyser 1 যার গতি প্রায় 62000 কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা , এই গতিতে ভ্রমণ করার ফলে এটি আজ আমাদের সৌরজগতের বাইরে চলে গেছে
কিন্তু আমাদের সূর্যের নিকটবর্তী নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টরি যেটি আমাদের থেকে 4.24 Light Years দূরে অবস্থিত , সেক্ষেত্রে আমরা যদি Voyser 1 এর গতিতে ওই নক্ষত্রে পৌঁছাবার চেষ্টা করি তবে 75,000 বছর সময় লেগে যাবে আর এত দিনে পৃথিবীতে আগামী 2500 প্রজন্মের লোক জন্মাবে ও মারা যাবেন , যার কারণে এই ভ্রমণের কোনো মনে থাকবে না কিন্তু যদি আলোর গতিতে ভ্রমণ করা যায় সেক্ষেত্রে পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে সময় লাগবে 1.28 সেকেন্ড , শুক্র গ্রহে 1.30 মিনিট, বুধ গ্রহে 5 মিনিট ও সূর্যতে 8.31 মিনিট অন্যদিকে মঙ্গল গ্রহে 4 মিনিট ,বৃহস্পতি গ্রহে 35 মিনিট ,শনি তে 71 মিনিট, ইউরেনাস এ 3 ঘণ্টা, নেপচুনে 4 ঘণ্টা ও প্লুটো তে পৌঁছতে 5.30 ঘণ্টা সময় লেগে যাবে । এ তো ছিল শুধুমাত্র আমাদের সৌরজগতের ভেতরকার কথা সেখানে আলোর গতিবেগে একটি Space Ship কে এক লক্ষ বছর লেগে যাবে আমাদের গ্যালাক্সি Milky Way কে শুধুমাত্র একবার চক্কর কাটতে । কেননা আমাদের মিল্কিওয়ে এর পরিধি হলো 1 লক্ষ আলোক বর্ষ । একবার ভাবুন এই গতিবেগে আমাদের নিকটবর্তী গ্যালাক্সি Andromeda তে পৌঁছতে কত সময় লাগতে পারে যেটি আমাদের থেকে 25 লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত , এমনটা হতে পারে আমরা সেখানে পৌছতে পৌছতে Andromeda গ্যালাক্সিই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ।

দ্বিতীয় সমস্যা

21 শতকের এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে পারা কোনো মহাকাশ যান তৈরি করা অসম্ভব ব্যাপার , কেননা আমাদের কাছে এরকম কোনো পদার্থই নেই যেটি দিয়ে তৈরি মহাকাশ যান আলোর গতিতে ভ্রমণ করার মত ভার নিতে সক্ষম , ওই যান বানাতে আমাদের প্রয়োজন পড়বে কোনো নতুন ধরনের পদার্থের এছাড়াও এটির ডিজাইনও একেবারে আলাদা হতে হবে আমাদের সাধারণ মহাকাশ যান গুলির তুলনায় ।

তৃতীয় সমস্যা

আমরা যদি কখনও কোনো ভাবে একটি মহাকাশযান বানাতে সক্ষম ও হই তবে সেটি চালানোর জন্যে আমাদের কাছে জ্বালানী উপলব্ধ নেই , ওই গতিতে যান চালাতে আমাদের কোনো নতুন ধরনের পদার্থকে FUEL হিসেবে ব্যাবহার করতে হবে । একটি উদাহরণ স্বরূপ ধরুন এমন একটি স্পেসশিপ হবে যেটির আকার আমাদের চাঁদের মত হবে যার ভেতর সম্পূর্ণ Fuel দিয়ে ভর্তি থাকবে , তো এমন আকারের একটি মহাকাশযান কে পৃথিবীতে বা পৃথিবীর বাইরে অর্বিটে বানানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার । এছাড়াও ধরুন যদি আমরা কোনো ছোট আকারের মহাকাশযান তৈরি করি যেটি আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে পারবে , তো তখন সেরকম কোনো মহাকাশযান কে চালাতে এতটা জ্বালানির প্রয়োজন পড়বে যা সম্পূর্ণ পৃথিবীতে একমাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যাবহার করা হয় । এক্ষেত্রে অনেক বিজ্ঞানীরা জ্বালানি হিসেবে AntiMatter ব্যাবহার করার কথাও ভেবেছে , এন্টিম্যাটার ব্যাবহার করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয় সাপেক্ষ হবে , উদাহরণ স্বরূপ এক মিলিগ্রাম পজিট্রন এর খরচ প্রায় আড়াই কোটি আমেরিকান ডলার , যেখানে এই এন্টিম্যাটার শুধুমাত্র 20 মিনিটের জন্যেই স্থায়ী থাকে ।

চতুর্থ সমস্যা

আমরা সকলেই জানি মহাকাশ একটি শূন্য জায়গা অর্থাৎ Vacume , কিন্তু মহাকাশে প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটার জুড়ে হাইড্রোজেনের 10 টি অ্যাটম থাকে যা আলোর গতিতে ভ্রমণ করার সময় সেই হাইড্রোজেন অ্যাটম ও স্পেসে থাকা ডিব্রিস পার্টিক্যাল গুলি স্পেসশিপ এর উপর বুলেটের আকারে আছরে পড়বে , যেমনটা ঠিক আকাশে উরন্ত কোনো এরোপ্লেন এর সাথে পাখির ধাক্কায় হয় আর এই ধাক্কার ফলে মহাকাশযানটি সহজেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে । আমাদের পৃথিবীতে এমন কোনো material বা পদার্থ নেই যা এই আঘাত থেকে মহাকাশযান টিকে ঢালের মতন রক্ষা করতে পারবে , এক্ষেত্রে যদিওবা কোনো শিল্ড বানানো সক্ষম হয় তবে সেটি কমপক্ষে 100 মিটার পুরু হবে যা একটি অসম্ভব ব্যাপার ।

পঞ্চম সমস্যা

আলোর গতিবেগে কখনই কোন ম্যাটার অস্তিত্বে থাকেনা , তার আকার অসীম ভাবে সংকুচিত হয়ে যায় ও সময় একদম থমকে যায় ।



তো এসব সমস্যা গুলি দেখার পর আপনাদের কি মনে হয় আমরা কখনো আলোর বেগে ভ্রমণ করতে পারবো ? নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন । এছাড়াও উপরে তো শুনলেনি যে আমরা যদি আলোর গতিতে ভ্রমণ করতে সক্ষম হয়েও যাই তাও আমরা আমাদের ব্রহ্মাণ্ড কে সম্পূর্ণ ঘুরতে পারবো না , এমনকি আমরা তো আমাদের সমগ্র জীবনকালে এই গ্যালাক্সি কেই অতিক্রম করতে পারবোনা ।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।