কিভাবে আবিষ্কার হলো সময় ?
সময়ে অর্থাৎ টাইম যা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস এই ভিডিওটি চালু করার আগে আপনারা সবাই এটি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে ভিডিওটি কত মিনিটের বা কত সময় দীর্ঘ , আপনারা কি কখনো এটি ভেবেছেন এই সময়ে কে আবিষ্কার করেছে ? একদিন 24 ঘন্টার ই কেনো হয়, 25 50 বা 100 ঘন্টার কেন হয় না ? আর একঘন্টা 60 মিনিটের ই বা কেন হয় 70 80 বা 100 মিনিটের কেন হয় না ? এছাড়াও এক মিনিটই বা 60 সেকেন্ডের কেন হয় সেটিও 70 80 কিংবা 100 সেকেন্ডের কেন হয় না ? এসব কখনও ভাবেননি তাইনা । আসলে ভাববার সময় কোথায় এই মডার্ন যুগে অনেকের কাছেই এখন টাকার থেকে সময়ের মূল্য অনেক বেশি , তো যাইহোক এখন যেহেতু আমি প্রশ্নটি করলাম এক দিন 24 ঘণ্টার ই কেন হয় ? এক্ষেত্রে আপনারা অনেকেই বলবেন এটা আবার কেমন কোশ্চেন 24 ঘন্টায় একদিন হয় কারণ পৃথিবীর তার নিজ অক্ষের চারদিকে 360° ঘুরতে 24 ঘন্টা সময় লাগে আর সেটাই স্বাভাবিক কেননা আমরা ছোটবেলা থেকেই ভূগোল পড়ে আসছি যে পৃথিবী 24 ঘন্টায় তার নিজ অক্ষের চারদিকে এক পাক খায় , এটি তো ঠিক আছে এবার একটু প্রাক্টিক্যালি ভাবা যাক আমাদের এই পৃথিবী, এই ব্রহ্মাণ্ড এসব কি আমাদের তৈরি করার নিয়ম চলে? কখনোই না এই প্রকৃতির একটি আলাদা নিয়ম রয়েছে যেখানে সাধারণত ই পৃথিবী ঘুরছে সেক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরালে পুনরায় ওই স্থানে চলে আসে , যেখানে আমাদের তৈরি করা ঘণ্টা মিনিটের কোনো ভূমিকাই নেই । চলুন অন্যভাবে বলি এখন 60 মিনিটে এক ঘণ্টা হয় সেখানে যদি 60 এর বদলে 30 মিনিটে এক ঘণ্টা হতো তবে সেক্ষেত্রে কি 24 ঘন্টায় পৃথিবী এক পাক খেত ? কখনোই না , কারণ প্রকৃতি একটি আলাদাই নীয়ম ফলো করে এই 24 ঘন্টা নিয়মটি শুধুমাত্র আমাদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে , কিন্তু 24 ঘণ্টাই কেন বা এক ঘণ্টায় 60 মিনিট বা এক মিনিটে 60 সেকেন্ড কেনো ? চলুন জেনে নিই ।

তো সময় সম্পর্কে এগুলো জানতে আমাদের আজ থেকে প্রায় 1550 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে যেতে হবে সেসময়কার অ্যাস্ট্রোনমার্স রা এটি তো জেনে গিয়েছিল যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে আর সেই সময়ে প্রাচীন মিশরীয়রা পৃথিবীতে অবস্থিত বাকি সভ্যতাগুলির চেয়ে অনেকটাই অ্যাডভান্স ও ডেভলপড ছিল , তারা সবার প্রথমে এটি অবজার্ভ করে যে দিন হচ্ছে তারপর রাত হচ্ছে আবার দিন হচ্ছে আবার রাত যেহেতু একটি নির্দিষ্ট ব্যাবধানে এই প্রোসেস টি হচ্ছে তাই তারা এগুলোকে অনেকগুলি ভাগে ভাগ করে গুনার কথা ভাবে, এক্ষেত্রে আপনারা ভাবুন কোনো কিছু কে গুনতে হলে আমরা কিভাবে গুনি 1 2 3 4 কিন্তু এক সেকেন্ড মনে রাখবেন আমরা 1550 খ্রীষ্টপূর্বাব্দে কথা বলছি সে সময়ে সাধারণত তারা কোন কিছু গোনার জন্য হাতের আঙ্গুল ব্যবহার করত যেমন আমাদের দুই হাতে দশটি আঙ্গুল রয়েছে ঠিক ওরকমই যেমন টা যদি কোন বাচ্চাকে বলা হয় 2 + 2 কতো হয়? তবে তারা হাতের আঙ্গুলগুলো গুনে 2 আর 2 = 4 এভাবে বলবে তেমনি ওই সময়েও আঙ্গুলে কোন কিছু হিসেব করা হতো প্রাচীন মিশরীয়রা একদিন কে দুই ভাগে ভাগ করে 12 ভাগ দিনের ও 12 ভাগ রাতের তো এভাবেই 12 ,12 ভাগ মিলিয়েই 24 হয় এভাবেই আসে 24 ঘন্টার কনসেপ্টটি, কিন্তু তারা 12 ভাগই কেন করেছিল? আমি প্রথমেই বলেছিলাম প্রাচীন মিশরীয় রা বাকি সভ্যতা থেকে অনেকটাই অ্যাডভান্স ছিল যেখানে বাকি সভ্যতা রা কাউন্টিং এর জন্য হাতের আংগুল ব্যবহার করত কিন্তু প্রাচীন মিশরীয়রা কাউন্টিং এর জন্য ব্যবহার করত আঙ্গুলের মাঝে থাকা জয়েন্ট গুলিকে , যেমন আমাদের একটি আঙ্গুল এ তিনটি করে জয়েন্ট থাকে সেভাবেই বুড়োআঙ্গুল বাদ দিয়ে চারটি আঙ্গুলে মোট 12 টি জয়েন্ট রয়েছে । এই কারণেই তারা দিনের ভাগ গুলিকে গোনার জন্য 12 12 ভাগ করেছে আর যার থেকে দিন ও রাত মিলিয়ে 12 যোগ 12 , 24 ঘন্টার কনসেপ্ট টি আসে , এরপর পনেরশো খ্রীষ্টপূর্বাব্দে তারা সান ডায়াল ইনভেন্ট করে , সান ডায়াল সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন এটি বেসিক্যালি সময় পরিমাপ করে যা মূলত সূর্যের উপর নির্ভর করে করা অর্থাৎ একটি লম্ব দণ্ডে সূর্যের আলোর যে ছায়া তৈরি হয় তার দ্বারাই এই ঘড়িটি সময় দেখায় । এছাড়াও সময় দেখার জন্য তারা সেসময় পিরামিড ও স্টোনহেঞ্জ এর ব্যবহার করতো যারপর জল ঘড়ির আবিষ্কার হয় তারপর মোম ঘড়ি ও অবশেষে বালুঘড়ি , এসব দিয়েই তারা সেসময় সময় মাপতো । কিন্তু এবারে প্রশ্ন হলো 60 মিনিটে এক ঘণ্টা কেন হলো ও 60 সেকেন্ডে এক মিনিট কেন হল ? প্রাচীন মিসরীয়দের দিন ও রাতের 12 ,12 ভাগের পর একটি প্রবলেম হচ্ছিল তাদের হিসেবে এক ধরনের ত্রুটি আসছিল যা হলো সিজন অর্থাৎ গরমকাল ও শীতকাল , যেখানে দিন ছোট-বড় হচ্ছিল সে ক্ষেত্রে তাদের 12 12 ভাগ ঠিকভাবে মিলছিল না, প্রাচীন মিশরীয় রা এটি তো বলেছিল যে দিন রাত 12-12, 24 ভাগে সম্পন্ন হয় কিন্তু তাদের এই ভাগগুলি প্রত্যেকটি কত সময়ের সেটি তখনও তারা ডিসাইড করেন , বিভিন্ন সিজনে দিন ও রাতের যে প্রবলেম হচ্ছিল সেটি ফেস করার পর সামনে এসে আরো প্রাচীন সভ্যতা , যা ছিল সুমেরীয় সভ্যতা উপরে আমরা দেখলাম মিশরীয় রা 12 কে ভিত্তি হিসেবে মানত যেখানে আমরা ও বাকি সভ্যতার 10 কে বেস হিসেবে মানি , কিন্তু এই সুমেরীও রা 60 কে ভিত্তি হিসেবে মানত । অর্থাৎ তারা সব ধরনের কাউন্টিং করত 60s সিস্টেম যেটি তারা ম্যাথমেটিক্স ও অ্যাস্ট্রোনমি তেও ব্যাবহার করত । এর ফলে তারা সবক্ষেত্রেই কাউন্টিং এ 60 কেই নিত এই কারণেই তারা তাদের 12-12 ঘন্টার প্রত্যেকটি ভাগ কে 60 ভাগে ভাগ করে দেয় , তো এসবের জন্যই পরবর্তী তে যখন সময়কে প্রপারলি ডিফাইন করা হয় তখন প্রাচীন লোকেদের তৈরি করা এই নীতি গুলিই প্রাধান্য দেওয়া হয় , তো এসবের জন্যই এক দিনে 24 ঘন্টা হয় ও এক ঘন্টায় 60 মিনিট হয় ও এক মিনিট 60 সেকেন্ড । যুগের পরিবর্তনে বিভিন্ন সময় পরিমাপক যন্ত্রের আবিষ্কার হলো, মেকানিকাল ক্লক তৈরি হলো অ্যাটমিক ক্লক তৈরি হলো এবং অবশেষে 1967 তে এক সেকেন্ড এর একটি সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া হলো , যেখানে বলা হয় এক সেকেন্ড একটি এমন টাইম পিরিয়ড যেখানে Caesium 133 অ্যাটম তার সম্পূর্ণ ভাইব্রেশন সম্পন্ন করে ।
তো এটাই ছিল সময় পরিমাপ এর ইতিহাস , আপনাদের এবিষয় নিয়ে কিছু বলার থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্টে জানাবেন । এছাডাও আর্টিক্যাল টি ভালো লাগলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে ভুলবেন না , সম্পূর্ণ টা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।।