তামাকজাত পদার্থ সেবনের ক্ষতিকারতা

বেশ কিছুদিন হল আপনারা সকলেই বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট এর মাধ্যমে হয়তো এই খবরটি শুনেছেন যে 7 নভেম্বর 2019 এর পর পশ্চিমবাংলায় গুটখা ,জর্ধা সহ সমস্ত তামাকজাত ও পান মসলা সামগ্রীর উৎপাদন ,সঞ্চয় তথা বিক্রির ওপর এক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে , গত 25 অক্টোবর 2019 এ পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় যারপর খবরটি গোটা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । আমরা তো সকলেই জানি তামাক বা Tobacco সেবনে আমাদের শরীরে বহু Carcinogenic substance এর প্রবেশ ঘটে যার ফলস্বরূপ ক্যান্সারের মত ভয়ঙ্কর রোগ হয়ে থাকে , আর এই কারনেই সরকারের নিয়ম প্রত্যেকটি যেকোনো ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের গায়ে 80% স্থানেই স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সতর্কবার্তা দেওয়া থাকে , এছাড়াও আমরা ছোটবেলা থেকেই যেকোনো মুভি দেখার আগে মুকেশের কাহিনী তো দেখেই থাকি তাও কেনো? কেনো সবাই এগুলির প্রতি এত আকর্ষক , কেনো আমরা সবকিছু জেনে বুঝেও এগুলি ছাড়তে পারিনা ও ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকি ? এছাড়াও গুটখা পান মসলা অর্থাৎ বিভিন্ন তামাকজাত পদার্থ চিবনো , smoking অর্থাৎ তামাক পদার্থ ধুম্রপানের মাধ্যমে গ্রহণ করা এসব আমাদের জন্য কত বেশি ক্ষতিকারক চলুন জেনে নিই ।

দেশে প্রতিবছর আশি হাজারের বেশি মানুষ ওরাল ক্যান্সার এর শিকার হয় শুধুমাত্র গুটখা তথা বিভিন্ন তামাকজাত দ্রব্য চর্বনের কারণে , এছাড়া বর্তমানে দেশে প্রায় 26 শতাংশ নাগরিকই গুটকা, পান মশলা , খৈনি , জর্দা ইত্যাদি non-smoke টোব্যাকো দ্বারা অ্যাডিক্টেড । গুটখা মূলত টুকরো সুপারি ও তামাকের উপর খয়ের , প্যারাফিন ও চুনের প্রলেপ সমৃদ্ধ মিষ্টি তথা নির্দিষ্ট কোন ফ্লেভারযুক্ত একটি মিক্সার যা বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত বর্ষ ,পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ইত্যাদি দেশে মৃদু উদ্দীপক দ্রব্য হিসেবে প্রচুর সেবন করা হয়, কেননা এগুলো সিগারেট, বিড়ি ইত্যাদি তুলনায় খুব দ্রুত উত্তেজক হিসেবে কাজ করে । তামাকের মধ্যে থাকা নিকোটিন সাবস্টেন্স মস্তিষ্ক থেকে বেশি পরিমাণে ডোপামিন নামক হরমোন তথা নিউরোট্রান্সমিটার এর ক্ষরণ ঘটায় যা ঐ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির মস্তিষ্ক কে খুব দ্রুত শান্ত করতে সাহায্য করে, আর মূলত এই ডোপামিন এর মুড পরিবর্তনশীল তথা ভালো অনুভূতি করানোর ইফেক্টের দরুনই খুব সহজেই এর প্রতি মানুষ এডিক্টেট হয়ে যায় ।
দৈনন্দিন জীবনের ডিপ্রেসন ও কাজের স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে কম বয়সি থেকে বয়স্ক বেশির ভাগ তামাক সেবনকারীরা এই গুটকা কেই বেশি প্রাধান্য দেয় কেননা এটি সিগারেট বিড়ির চেয়ে বেশি সাস্রয় ও দ্রুত ফলপ্রসূ হিসেবে কাজ করে ।
এক্ষেত্রে গুটখা বা যেকোনো চিবোনো প্রজাতির অর্থাৎ smokeless টোব্যাকো সেবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো ওরাল ক্যান্সার ।
গুটকা খৈনি জর্দা ইত্যাদির সেবনে মুখের ভেতরের প্রাচীরে এই ধরনের সাদা সাদা দাগ তৈরি হতে যাকে লিউকোপ্লেকিয়া বলা হয় , যা থেকেই পরে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়ে থাকে এছাড়াও বহুদিন যাবৎ গুটখা বা যেকোনো তামাকজাত পদার্থ চিবনোর ফলে মুখে সাব মিউকাস ফাইব্রোসিস তৈরি হতে থাকে যার দরুন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মুখ ধীরে ধীরে কম খুলতে শুরু করে , ও এভাবেই বহুদিন এসব ব্যাবহার করার পর ব্যাক্তি ঠিকভাবে আর হা করা বা মুখ বরো করে খুলতে পারেনা ।
এছাড়াও গুটখা ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে আমাদের পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রএও , গুটখা পান মসলা ও চুন দ্বারা নির্মিত খৈনি জাতীয় পদার্থ আমাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার তৈরির জন্য দায়ী , এ ছাড়াও গুটখা খাবার পর দাঁত কালচে হওয়া ও মুখে দুর্গন্ধ হওয়া তো সাধারণ বেপার ।

গুটখা আমাদের শরীরের জন্যে এত বেশি ক্ষতিকর দ্রব্য হওয়ায় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রাজ্যে এর অনেক বছর আগে থেকেই নিষিদ্ধ করন নিয়ে বহু তর্কাতর্কি সর্বদাই চলে আসছে ।
তো এক্ষেত্রে আপনারা ভাবছেন হয়তো বর্তমানে যেসমস্ত পান মসলার বিজ্ঞাপন আপনারা বিভিন্ন সেলিব্রিটি দ্বারা দেখে থাকেন সেসবে তো কোনো তামাকজাত পদার্থ থাকেনা , যদি এরকম ভাবেন তবে আপনি ভুল করবেন কেননা এগুলো বিভিন্ন বড়ো বড়ো ব্র্যান্ডের একধরনের চক্রান্ত , এরা আসলে এদের প্রোডাক্টের ভেতর সরাসরি তামাক মিশ্রণ না করে বরং এই প্যাকেটের সাথে আলাদা করে একটি টোব্যাকো এর প্যাকেট দিয়ে থাকে যা ঐ সমস্ত পান মসলার প্যাকেটের সাথে অনেক স্বল্পমূল্যে অথবা অনেক সময় ফ্রীতেও পাওয়া যায় ।
গুটখার মিশ্রণের মধ্যে চার হাজারেরও বেশি কেমিক্যাল থাকে যার ভেতর চল্লিশ টিরও বেশি কর্শিনোজেনিক পদার্থ উপস্থিত যা কান্সার সৃষ্টির জন্যে ব্যাপক ভাবে দায়ি , 2009 সালের গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের মতে সারাবিশ্বে 40% মহিলা বিভিন্ন পান মসলা সামগ্রীর সাথে এই টোব্যাকো গ্রহণ করে থাকে সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় এই তামাকজাত পদার্থের দরুন সদ্যোজাত এর কম ওজন ও সময়ের আগেই প্রসব সহ বিভিন্ন অসমন্যতা দেখা দিয়ে থাকে ।

এবারে আপনি যদি ভাবেন গুটখা সিগারেটের চয়ে কম ক্ষতিকর তবে আপনি ভুল কেননা আমরা সিগারেটের মাধ্যমে 20 শতাংশ তামাক গ্রহণ করি ও বাকি 80 শতাংশই বাইরে বার করে দিই কিন্তু এই গুটখার ক্ষেত্রে প্রায় সম্পূর্ণটাই আমরা গ্রহণ করে ফেলি ।

এবারে সবশেষে আসে গুটকার কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া যা হলো বমি ভাব মাথা ধরা অনিদ্রা উচ্চ রক্ত চাপ ইত্যাদি , গুটকার প্রভাব প্রত্যেকটি মানুষের উপর আলাদা আলাদা ভাবে পরে থাকে যা আপনার বডি ওয়েট হাইট ও ইমিউনিটির উপর নির্ভর করে , এমনটা আপনার মনে হতেই পারে যে আপনার পরিচিত কোন লোক যে দশ বছর কুড়ি বছর ধরে গুটকা পান সুপারি খৈনি এসব খেয়ে আসছে কই তার তো কোন ক্যান্সার হয়নি ? এমন টা আপনার ভুল ধারণা আপনার ক্ষেত্রে দেখা গেল প্রথম প্যাকেটটি খাওয়ার পর থেকেই আপনার দেহে ক্যান্সার এর সূত্রপাত শুরু হয়ে গেল , যেমনটা আমি প্রথমেই বললাম যে প্রত্যেকটা মানুষের উপর আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলেথাকে ।
গুটকা পান মশলা ইত্যাদির ব্যাবহারে প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশে নোংরা হচ্ছে যেকোনো সরকারি অফিস হসপিটাল বাথরুম বা বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে কোনো দেওয়ালের কোনায় আপনি তাকালেই সেই বাজে দৃশ্যটি দেখতে পারবেন ।
তো আপনার কি মনে হয় গুটখা কি সমস্ত দেশজুড়ে চিরকালের জন্য ব্যান হওয়া উচিত ? নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই জানান , এছাড়াও বাকিদের সচেতন করতে এই পোষ্ট টি প্রচুর শেয়ার করুন ও আপনিও যদি কোনো ভাবে তামাকের সেবন করে থাকেন তবে সময় থাকতে সচেতন হন ধন্যবাদ ।।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।