চোখ (Eyes)

কথায় বলে চক্ষু রত্ন মহারত্ন, চোখের মতাে জিনিস নেই । চোখ না থাকলে ঈশ্বরের সৃষ্ট এই বিশ্ব চরাচর আমাদের কাছে অর্থহীন হয়ে যেত।

দেহের এই মহারত্নটি যেমনি সূক্ষ্ম তেমনি জটিল যন্ত্র, সম্ভবতঃ মস্তিষ্কের পরে এটিই শরীরের সর্বাপেক্ষা জটিল যন্ত্র ।

অবস্থান –

আমাদের চোখ দুটি থাকে মুখের অস্থিগুলির মধ্যেকার দুটি গর্তের মধ্যে। গর্ত দুটির নাম হলাে অক্ষিকোটর।

চোখের বিভিন্ন অংশ

অক্ষি গোলক – চোখ দুটো বা যে অংশ দিয়ে আমরা দর্শন করি তা থাকে দুটি চক্ষু গােলকে স্থাপিত, অর্থাৎ সমগ্র চোখটি একত্রে হলো চক্ষু বা অক্ষি গোলক ।

অপটিক নার্ভ – এই চক্ষু গােলক দুটির পেছনের দিকে থাকে দুটি শিরা, ঐ শিরার সঙ্গে যােগ থাকে মস্তিষ্ক অর্থাৎ brain, এই সংযোগ টিকেই বলে Optic Nerve বা চক্ষু স্নায়ু।

স্ক্লেরা- চোখের প্রায় সবটাই থাকে কোটর বা গহবরের মধ্যে থাকে কিন্তু সামান্য একটু খােলা অংশ থাকে বাইরে যা আমরা দেখে থাকি, এক্ষেত্রে পেছনের চক্ষু স্নায়ু দুটি হয় বেশ মােটা আর অক্ষি গােলক (Eye ball) কে যদি ফল বলে ভাবা হয় তাহলে বলা যেতে পারে বোঁটার মতাে । এখানে তিনটি পর্দা দিয়ে চক্ষুগােলকটি আবৃত থাকে যেখানে সাদা রঙের খুব শক্ত বাইরের আবরণটিকেই বলে Sclera । শরীরের অন্যান্য অংশ বা আবরণের চেয়ে শক্ত বলেই এটি অক্ষিগােলকের রক্ষা কবচ নামেও পরিচিত ।

কর্নিয়া – সামনের স্বচ্ছ কাচের মতাে অংশটি হলাে কর্নিয়া (Cornea)।

পিউপিল – এই কর্নিয়ার মাঝে একটি ছিদ্র থাকে, তাকে বলে pupil বা তারারন্ধ্র ।

করয়েড – বাইরের আবরণের (Sclera) ভেতরে অক্ষিগােলকের দ্বিতীয় একটি আবরণ বা পর্দা আছে। এই পর্দাটি সূক্ষ্ম জালের মতাে, এতে প্রচুর রক্তবাহী নালী এসে মিশেছে। এটি হলাে Choroid।

সিলিয়ারি বডি – করয়েড শেষ হয়েছে সামনের দিকে একটি বৃত্তাকার অংশে। এই বৃত্তাকার অংশটিকে বলে Ciliary body যা ciliary muscle দিয়ে তৈরি ।

আইরিশ – Ciliary Muscle এর থেকেই ছোট্ট বৃত্তাকার, আর একটি সংকোচনশীল পর্দার উৎপত্তি হয়েছে। এই পর্দাটিকে বলে Iris। এই পর্দাটির রঙের ভিন্নতার জন্যই কারাে চোখ কালাে, কারাে ব্রাউন, কারাে বা বেড়ালের চোখের মতাে দেখায়। চক্ষু গােলকের সামনের ভাগ এসে Ciliary body ও Iris অর্থাৎ চক্ষুতারার সঙ্গে মিশে গেছে।

রেটিনা – ঢক্ষুগােলকের তৃতীয় পর্দা বা কোষ আবরণটির নাম হলাে অক্ষিপট বা রেটিনা (Retina)। কেউ কেউ একে চিত্রপটও বলেন, এটি চক্ষু গােলকের একেবারে ভেতরে Sclera ও choroid-এর পর অবস্থান করে। এটি খুবই নরম নার্ভ টিসু দিয়ে তৈরি। অক্ষি গােলকে পেছনের অংশে যেখানে optic nerve বা চক্ষু স্নায়ু যুক্ত থাকে, সেই অংশ থেকে রেটিনা পর্দা মােটা থেকে ক্রমশঃ সামনের দিকে এসে পাতলা হয়ে গেছে। ঠিক যেমনটি Choroid পর্দার ক্ষেত্রে হয়েছে, তেমন করে পাতলা হয়ে এসে চক্ষু তারা (Iris) ও Celiary body-র সঙ্গে মিশে গেছে।

লেন্স বা মনি –  আইরিশ (Iris) বা চক্ষুতারার ঠিক মাঝে যে একটি গােলাকার ছিদ্র থাকে তা হলাে তারারন্ধ্র বা Pupil আর আইরিশের পেছনে থাকে লেন্স।

কনজংটিভা- চোখের সামনের সাদা মতাে অংশ বা ঝিল্লিকে বলা হয় conjunctiva , সে কারণে এই অংশে রােগ বা সংক্রমণ হলে তাকে Conjunctivities বা Ophthalmia বলে।
আইরিশের পেছনের লেন্স দুটি Ligament দিয়ে আবদ্ধ থাকে। লেন্স দিয়ে আলাে গিয়ে পড়ে রেটিনার ওপর। যেখান থেকে তা Optic Nerve বা চক্ষু স্নায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে তার অনুভূতি চলে যায় মস্তিষ্কে, এ ভাবেই আমরা দেখতে পাই।

অ্যাকোয়াশ হিউমর- লেন্স ও কর্নিয়ার মধ্যে একটু ফাক থাকে, এই ফাক পুর্ণ থাকে জলের মতাে এক ধরনের তরল পদার্থ দিয়ে যাকেই Aqueous humour বলে ।

ভিট্রিয়াস হিউমর- aqueous humour অংশটাকে বলে Anterior Chamber আর lens-এর পেছনে যে বড় অংশ তাকে বলা হয় Posterior Chamber। এই অংশটিও ডিমের কুসুমের মতাে ঘােলা লবণাক্ত তরল পদার্থে পূর্ণ থাকে যাকেই Vitreous humour বলে ।

অশ্রু গ্রন্থি – অক্ষি গোলকের ওপরে নিচের উল্টো দিকে দুদিকে দুটি গ্রন্থি থাকে। এই গ্রন্থি দু’টিকে বলা হয় অগ্রন্থি বা Lacrimal Glands দেখতে অনেকটা ছােট এলাচের মতাে। এর মধ্যে সরু সরু নল (Lacrimal ducts) সংযুক্ত থাকে। শােকে, দুঃখে, আনন্দে, আঘাতে, উত্তেজনায় বা চোখে কিছু পড়লে এই গ্রন্থি থেকেই জল এসে চোখ দিয়ে ঝরে। এছাড়া নাকের দিকে চোখের কোণ থেকে একটা নালী বেরিয়ে এসে নাকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে (Nasal Duct)। সেকারণেই কান্নার সময় চোখ দিয়ে যদি বেশি জল ঝরে তাহলে কিছু জল নাক দিয়েও ঝরতে দেখা যায়।

চোখের পাতা – অক্ষিপট বা চোখের পাতা চোখকে ধুলাে বালি থেকে রক্ষা করে। এতে (Eye lids) সরু সরু লােমও (Eye lashes) থাকে। যে পেশীর দ্বারা ঐ অক্ষিপট বা ঢাকনা ওঠানামা করে তাকে বলে লেভেটার পেশী। এই লেভেটার পেশীতে থাকে খুব সরু সরু উপাস্থি (Tarsal Cartilage)I

মােটামুটি ৬টি ছােট ছােট মাংসপেশী দিয়ে আমাদের অক্ষি গােলকটি চোখের কোটরে আবদ্ধ আছে। ঐ মাংসপেশীর মাধ্যমে চক্ষু গােলককে চারপাশে ঘুরিয়ে ইচ্ছেমতাে চারদিক দেখতে পারি। যেহেতু পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে চক্ষু সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাই একে যত্নে রাখা উচিত।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।