” দ্যি ২১ গ্রাম থিওরি ” বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্ট
বিজ্ঞান যেখানে যেকোন ঘটনাকে তখনই সত্যি বলে মানা হয় যখন সম্পূর্ণ ঘটনাটির কোন সলিড সাইন্টিফিক প্রুফ থাকে আমাদের কাছে , বিজ্ঞানীরা প্রচুর খাটনি করে তাদের যে কোনো খোঁজ বা আবিষ্কারের পেছনে । তাদের এক একটি খোজের জন্য কেউ 10 বছর কেউ 20 বছর এছাড়াও কেউ কেউ তো তাদের সারাটা জীবনই লাগিয়ে দেয় খোঁজ টিকে প্রুফ করার জন্য , অবশেষে তারা তাদের এই এত বছরের খোঁজ প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাইন্টিফিক এক্সপেরিমেন্টস করে থাকে , কিন্তু আপনারা কি জানেন বিজ্ঞানে এতদিনের ইতিহাসে এরকমও কিছু অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্টস করা হয়েছে যেগুলি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক ছিল যেখানে কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা রিস্ক নেবার পরেও সফল হয়েছে ও যেখানে অধিকাংশই তাদের পরীক্ষায় সফল হতে পারেনি । আজকে আমরা জানবো বিজ্ঞানের এই রকমই একটি ব্যর্থ এক্সপেরিমেন্টের কথা যেখানে সৌল অর্থাৎ আত্মার ওজন পরিমাপ করার চেষ্টা করা হয়েছিল , আর সেইসঙ্গেই জানবো এটির সম্বন্ধে প্রচলিত ভুল ধারণাটির সমন্ধে ।

10 এপ্রিল 1901 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে অবস্থিত হেভারহিল শহরের এক ফিজিশিয়ান ডক্টর ডাঙ্কান মেকডুগাল ও তার কিছু সহকর্মী মিলে একটি এমন বিচিত্র এক্সপেরিমেন্ট করে যা সেইসময় সারা বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান মহলে সমালোচনার বিষয় হয়ে ওঠে । পরীক্ষাটি ছিল আত্মার ওজন পরিমাপ করার , যেখানে মানুষ মরার আগে ও মারা যাবার ঠিক পরের মুহূর্তে ওজন নিয়ে তার পার্থক্য নির্ণয় করা হয়েছিল , আমরা তো সকালে শুনেছি ও যানি যে জীবিত মানুষের শরীরে আত্মা থাকে যা মরার পর বাইরে বেরিয়ে যায় । ডক্টর ডাঙ্কান মেগডুগাল এই বেরিয়ে যাওয়া আত্মারই ওজন পরিমাপ করতে চেয়ে ছিলেন ।
এক্ষেত্রে নার্সিংহোম থেকে এমন ছয়টি রোগীর করা হয় যাদের মৃত্যু খুব তাড়াতাড়ি ঘটত, যেখানে পাঁচ জন পুরুষ ও একজন মহিলা এক্সপেরিমেন্টাল সাবজেক্ট হিসেবে নেওয়া হয়েছিল ছয়জন পেশেন্টের মধ্যে চারজনের টিবি ছিল ও একজনের ছিল ডায়াবেটিস ও বাকি একজনের রোগের কারণ ডাক্তার রা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে পারেনি, এবারে যখন ডক্টর মেগডুগালের মনে হলো যে রোগীটির মৃত্যুর সময় কাছে এসেছে সে সময় তাদের এক এক করে একটি বিশেষ ধরনের ওয়েট মেশিনের রাখা হয় ও মৃত্যুর আগ মুহূর্তে তার ওজনের পরিমাপ নেয়া হয় ও মৃত্যুর পরের মুহূর্তে পুনরায় ওজনের পরিমাপ দেখা হয় । ওয়েট মেশিনটি এতটাই সূক্ষ্ম ছিল যাতে খুব ক্ষুদ্র ওজনের ডিফারেন্সও পরিমাপ করা যেত এভাবে একটি পেশেন্ট এর যখন মৃত্যু হল সে সময় তাঁর ওয়েট স্কেলের মান 21.3 গ্রাম কমে যায় , পরবর্তী পেশেন্ট এর ক্ষেত্রে ওজন কমে কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তা আবার নরমাল মান এ ফিরে আসে, আরেকটি পেশেন্টের ক্ষেত্রে মৃত্যুর পর ওজন কমে নি কিন্তু এক মিনিট পর ওজন হ্রাস হয় যা প্রায় 28 গ্রাম ছিল , অপর আরেকটি পেশেন্টের ক্ষেত্রে ওজন শুরুতে কমলেও কিছুক্ষণের মধ্যে তা আরো বেশি বেড়ে যায় ও বাকি অবশিষ্ঠ দুটি পেশেন্টের ক্ষেত্রে ওয়েট স্কেলে মাপ সেট করার আগেই তাদের মৃত্যু হয় যার ফলে তাদের পরিমাপ নেওয়া সম্ভব হয়নি । এই প্রয়োগে সবার ক্ষেত্রে ওজনের ডিফারেন্ট আলাদা আলাদা হওয়ার ফলে ডক্টর ডাঙ্কান মেগডুগল এই কথাটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি যে আত্মা বলে কিছু থাকে ও তাকে ওজন করে পরিমাপ করা সম্ভব । কেননা সত্তিই যদি তাই হত তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে ওজনের ডিফারেন্স একই হত কিন্তু সেটা হয়নি ।।
বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতে মৃত্যুর পর ওজন কমে যাবার পেছনে বেশকিছু কারণ থাকতে পারে যেমন মৃত্যুর পর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেধে যাওয়া, এছাড়াও ফুসফুসের সর্বশেষ বায়ু বেরিয়ে আসা, বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কেমিক্যাল রিয়াকসনের ফলে উৎপন্ন গ্যশিয়াস সবসস্টেনস শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ।
মানুষের দেহে এই এক্সপেরিমেন্ট টি করার আগেও ডক্তর মেগডুগাল 15 টি কুকুরের উপর এই এক্সপ্রেমেন্ট টি করেছিল কিন্তু সেখানেও তাদের কোন ওজনের পার্থক্য পায়নি তিনি , 1901 এ এই পরীক্ষাটি ব্যর্থ হওয়ার ফলে এর কোন ফলাফল পাবলিকলি রিলিজ করা হয়নি কিন্তু এক্সপেরিমেন্টএর 5 বছর পর সর্বপ্রথম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এটি খোলাসা করা হয় , এক্ষেত্রে তখন এই The 21 Gram Theory নামে প্রচলিত হতে শুরু হয় কারণ ডক্টর মেগডুগালের মতে তাদের টিমের প্রত্যেকটি ডাক্তার আলাদা ভাবে তাদের নিজেদের মাপ নিয়ে ছিল যাতে কোনো ত্রুটি না থেকে যায় , এরপরে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা মাপ গুলিকে এভারেজ করে তাদের আত্মার ওজন অর্থাৎ মৃত্যুর আগে ও পরের ওজনের হ্রাস 21 গ্রাম পেয়ে ছিল কিন্তু যা মূলত ওই একটি পেশেন্টের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল যার ওজন 21.3 গ্রাম পরিবর্তন হয়েছিল ।।
আরেকটি অবাস্তব ব্যাপার যেটি ডক্টর ম্যাকডুগাল বলেছিল সেই 28 গ্রাম ওজন হ্রাসের পেশেন্ট এর ক্ষেত্রে যেখানে এক মিনিট পর তার ওজন হ্রাস ঘটে, তিনি বলেছিলেন ওই মৃত ব্যাক্তি শারীরিক দিক দিয়ে অনেক সুস্থ সবল ছিল যার ফলে তাঁর আত্মার শরীর ছেড়ে বেরোতে এক মিনিট সময় নিয়েছিল তবে আপনারা একবার ভাবুন ডক্টর মেগডুগালের মতে যেই পেশেন্টের ক্ষেত্রে ওজন হ্রাসের পর আবার তার আগের ওজনে ফিরে আসে সে ক্ষেত্রে কি তার আত্মা পুনরায় তার শরীরে ফিরে এসেছিল ? আপনারাই বলুন এটা কি কখনো সম্ভব ? না কখনোই সম্ভব নয় ।
তো এর থেকেই আমরা জানতে পারি এটি একটি বিফল পরীক্ষা , আত্তার ওজন কখনোই প্রমাণ হয়নি ও আত্তার মত কোনও জিনিস মৃত্যুর পর শরীর ছেড়ে বেরিয়ে যায় তারও কিছু প্রমাণ হোয়নি ।।
এসব জানার পর আপনাদের কি মতামত নিচে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন । ভালো থাকবেন, পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।।