জন্মের আগে ঘটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি (ফার্টিলাইজেশন)
পৃথিবীতে জন্ম নেওয়ার আগে থেকেই আমরা দৌড়ে চলেছি যতদিন বাঁচব আমরা সবাই এভাবে ছুটে চলবো কখনো অর্থের পেছনে কখনও সুখের পেছনে কখনো স্বপ্নের পেছনে তো কখনো সমৃদ্ধির পেছনে আর যার ফিনিশিং লাইন হল মৃত্যু , মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি যে জার্নি সেটা তো আমরা সকলেই যানি সকলেই অনুভব করেছি ও করছি , কিন্তু আমাদের সবার জন্মের আগেরও একটি কাহিনী থাকে একটা জার্নি থাকে একটি যুদ্ধ থাকে যেটি তে জয়ী না হতে পারলে খেলা শুরুর আগেই শেষ বন্ধু । তো আজকে আমরা জানবো সেই লড়াইয়ের কথা যে কিভাবে আমরা সেখানে জেতার পর পৃথিবীতে এসেছি এক নতুন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছি ।

আমরা সকলেই জানি পুরুষদের প্রাইমারি সেক্স অর্গান শুক্রাশয় অর্থাৎ টেস্টিস ও নারী দের ডিম্বাশয় অর্থাৎ ওভারি , এক্ষেত্রে শুক্রাশয় থেকে নির্গত হয় শুক্রাণু বা স্পার্ম ও ডিম্বাশয়ে থেকে নির্গত হয় ডিম্বাণু বা ওভাম , পুরুষদের একজোড়া শুক্রাশয় স্ক্রটাম নামক থলির ভেতর অবস্থান করে ও নারীদের দুটি ডিম্বাশয় তল পেটের দুই পাশে অবস্থান করে ।
সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের সময়ে প্রায় 30 কোটি শুক্রাণু ভ্যাজাইনাতে প্রবেশ করে প্রবেশের পরক্ষনেই সেখানকার পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় লক্ষ লক্ষ স্পার্ম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায় ও বাকিরা সার্ভাইভ করতে সক্ষম হয় এভাবে তারা সার্ভিক্স এর ভেতর দিয়ে ইউটেরাসের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে যা স্বাভাবিক দিনে বন্ধ অবস্থায় থাকে , এই প্যাসেজ টি শুধুমাত্র মাসের নির্দিষ্ট দিন গুলোতেই উন্মুক্ত হয় । সার্ভিক্স এর ভেতর দিয়ে পাস হওয়ার সময় সেখানে অবস্থিত সারভিক্যাল মিউকাস নামক সাবসটেন্স এর সঙ্গে রিয়াকশনের ফলে অনেক শুক্রাণু প্রাণ হারায় ও বাকিরা অগ্রসর হতে থাকে ইউটেরাসের দিকে , এই সময়ে ইউটেরাসের ভেতরে ঘটা মাসকিউলার ইউটেরাইন কন্ট্রাকশন একদিকে যেমন শুক্রাণু দের অগ্রসর হতে সাহায্য করে অপরদিকে বহুসংখ্যক এতে চাপা পড়ে মারা যায় এছাড়াও কিছুসংখ্যক মারা যায় সেখানে অবস্তিত ইমিউনসিস্টেমের অ্যাটাক এর ফলে , এবারে অর্ধেক সংখ্যক শুক্রাণু ডান ফ্যালোপিয়ান টিউবে ও বাকি অর্ধেক সংখ্যক বাম ফ্যালোপিয়ান টিউবে প্রবেশ করে, এদিকে ওভারি থেকে সদ্য নির্গত ডিম্বাণু ফ্যালোপিয়ান টিউবের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে ফ্যালোপিয়ান টিউবে অবস্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিলিয়া গুলি ডিম্বাণু বা অভাম টিকে ইউটেরাসের দিকে অগ্রসর হতে সাহায্য করে, এই সময়ে প্রচুর সংখ্যক স্পার্ম সিলিয়াতে আটকে যায় ও মারা যায় । এত অবধি জার্নিতে শুক্রাণু গুলি নিস্তেজ হয়ে যায় ,যার নিরাময়ের জন্য এক প্রকার কেমিক্যাল নিঃসরণ ঘটে যার ফলে তারা বাকিটা পথ অতিক্রম এর জন্য প্রচুর পরিমাণ এনার্জি অর্জন করে আরও তীব্র বেগে ডিম্বাণুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে , 30 কোটি শুক্রাণুর ভেতর একটি শুক্রানু যেটি সবার প্রথমে ডিম্বাণুর ভেতরে ঢুকে অভ্যাম কে নিষিক্ত করবে সেই জয়ী হবে , ভ্যাজাইনা থেকে ডিম্বক অবধি শুধু মাত্র 5 থেকে 6 ইঞ্চির এই পথ অতিক্রম করতে স্পার্ম গুলির এক থেকে দুই দিন সময় লেগে যায় । এই এগ সেল অনেক গুলি আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে যার বাইরের আবরণ টি হলো করনা রেডিয়াটা , যেটিকে স্পার্ম গুলি অতিক্রম করে পরবর্তী লেয়ারে এসে পৌঁছয় যা হল যোনা পেলাসিডা । এক্ষেত্রে শুক্রাণুর মাথায় অবস্থিত অ্যাক্রসম নামক একটি বিশেষ পচন কারি উৎসেচকের ক্ষরণের ফলে যোনা পেলুসিডা তে ছিদ্র তৈরীর মাধ্যমে শুক্রাণু ভেতরে প্রবেশ করে , এভাবে ক্রমশই এগ সেল স্পার্ম টিকে ভেতরে নিয়ে নেয়, অবশেষে ডিম্বাণুর ভেতরে মেল প্রো নিউক্লিয়াসের সাথে ফিমেল প্রো নিউক্লিয়াসের মিলন ও তাদের সাইটোপ্লাজম অবিচ্ছিন্ন ভাবে যুক্ত হয়ে জাইগোট গঠন করে ও এভাবেই ডিম্বাণু টি নিষিক্ত হয় । এক্ষেত্রে প্রথম শুক্রাণু টি ডিম্বাণুর ভেতরে প্রবেশের পর বিভিন্ন কেমিকাল সবস্টেনস রিলিজ ঘটে ও যোনা পেলুসিডা লেয়ার টি শক্ত হয়ে যায় যার ফলে বাকি শুক্রাণু গুলি আর ছিদ্র তৈরীর মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না ও তারা ওভাম কে নিষিক্ত করতে অক্ষম হয় । অবশেষে নিষিক্ত ডিম্বানু টি ইউটেরাসের ইনার মেমব্রেনে যাকে এন্ড্রমেট্রায়াম বলে সেখানে ইমপ্লান্ট হয় ও প্রস্তুতি নেয় আগামী 9 মাসের জন্য , এভাবে ক্রমাগত এক কষী জাইগোট টি ক্লিভেজ তৈরির মাধ্যমে মরুলা, ব্লাস্টুলা ও গ্রস্টুলেশনের ফলে গ্রষ্টুলা ইত্যাদি পর্যায় অতিক্রম করে ভ্রূণ টি বড়ো হতে থাকে , এক সপ্তাহ , দু সপ্তাহ এভাবে এভাবেই ধীরে ধীরে ভ্রূণটি বড়ো হতে থাকে ।
আজকে আমরা জানলাম আমাদের জন্মের আগে ঘটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির কথা ও সঙ্গেই জানলাম সেই কঠিন সফরের কথা যা অতিক্রম করে ও সেটিতে জয় লাভ করে আমরা এই পৃথিবীতে জন্মেছি, আমরা জন্ম নেওয়ার জন্য লড়েছি ও জন্মের পর পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়ছি এছাড়াও আমাদের এই লড়াই প্রতিনিয়ত চালিয়ে যেতে হবে আমাদের প্রাপ্ত অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের সকলকে দাঁড়াতে হবে সমাজের দুর্নীতি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ।